মোঃজিল্লুর রহমান চারঘাট,(রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর চারঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে রোগাক্রান্ত ভারতীয় গরু আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ গরুর মাংসে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকছে, তেমনিভাবে দেশীয় প্রজাতির গবাদিপশুতে ছোঁয়াচে খুরাসহ নানা রোগও ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে রাতারাতি ধনী হওয়ার নেশায় চোরাই পথে গরু আনতে গিয়ে ইতিমধ্যে চারঘাট সীমান্তে বেশ কয়েকজন যুবক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে ভারতে জেলের ঘানি টানছেন। সবশেষ গত বুধবার রাওথা এলাকার আবু জাহের ও মিলন আলী বিএসএফের হাতে আটক হয়েছেন।
সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ ছিল। তবে চলতি মাসে এসব গরু ফের আসতে শুরু করেছে। অবৈধভাবে আনা এসব গরু প্রথমে স্থানীয় গরুর সঙ্গে বেঁধে রেখে তারপর পশুর হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখান থেকেই ট্রাকে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এলাকার দুজন বলেন, প্রতি রাতেই উপজেলার রাওথা, গোপালপুর, পিরোজপুর ও ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে গরু প্রবেশ করছে। চোরাই গরু আমদানি সিন্ডিকেটের প্রধান উপজেলার রাওথা গ্রামের ইউপি সদস্য তজলুল হক ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান। মূলত প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের লোকজনই দাপটের সঙ্গে প্রতিনিয়ত এসব রোগাক্রান্ত গরু অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন।
চোরাই পথে গরু আনার অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় ইউপি সদস্য তজলুল হক বলেন, ‘আমার এলাকার দুজন বিএসএফের হাতে আটক হয়েছে, এটা সত্য। তবে তাঁরা অন্য পথে ভারতে গরু আনতে গিয়েছিল। আমার কোনো গরু ভারত থেকে আসছে না। অন্য কোনো গ্রুপ নিয়ে আসতে পারে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, চারঘাট উপজেলা গরু-ছাগল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত ঈদে ক্রেতা না থাকায় অনেক খামারি গরু বিক্রি করতে পারেননি। এ অবস্থায় ভারতীয় গরু আসার কোনো প্রয়োজন নেই। আর অবৈধ পথে চোরাচালানের মাধ্যমে যেসব পশু আসে, তার বেশির ভাগই রোগাক্রান্ত ও অস্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টেরয়েড দিয়ে এসব পশু মোটাতাজাও করা হয়। ফলে এর মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি চোরাচালানে আসা পশু থেকে দেশি গবাদিপশুতে খুরাসহ বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, চোরাচালানে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসার কারণে দেশের খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চোরাচালান বন্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
অবৈধ পথে গরু আসার ব্যাপারে ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার জয়নাল হোসেন বলেন, ‘আমি মাত্র কয়দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। আগে কী হয়েছে সেটা জানি না। তবে বর্তমান সময়ে চোরাইপথে কিছুই প্রবেশ করতে পারবে না। বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশ সর্বদা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গরু, মাদকসহ সব রকম চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে।
Leave a Reply